যুক্তরাজ্যে আমীরে জামায়াতকে বিশাল নাগরিক সংবর্ধনা


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ৭:৩৯ অপরাহ্ন
যুক্তরাজ্যে আমীরে জামায়াতকে বিশাল নাগরিক সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার:পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারেরসহযোগিতা কামনা- ডা:শফিকুর রহমান

যুক্তরাজ্যে সফররত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। পাচারকৃত টাকা ফেরত পেলে বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

তিনি ১৭ নভেম্বর, রবিবার, লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি-তে কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ কর্তৃক তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক ‘সিভিক রিসিপশন’ (নাগরিক সংবর্ধনা) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি বলেন, সত্য একবার বললেই প্রতিষ্ঠিত হয় কারণ সেটা সত্য। আর মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করতে বারবার বলতে হয়। আওয়ামী লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। ১৬ বছর দেশের মানুষের সাথে আওয়ামী লীগ যে আচরণ করেছে তার জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। তারা মানুষের অধিকারই শুধু হরণ করেনি, তারা দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করে রেখেছিলো। তারা চোখের সামনে মানুষকে হত্যা করেছে। আমরা চাই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক। ডাঃ শফিক আরও বলেন, আমি নিজেও অন্যায় বিচারের একজন ভিকটিম। আমাকে গ্রেফতার করে বলা হয়েছে, আমি নাকি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি!

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকশ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়ার হীন প্রচেষ্টা চালায় এবং একই সাথে বিডিআর বাহিনীকেও শেষ করে। এই দুই খুনের মিশনের পর তারা আঘাত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর। অনেকেই ভেবেছিলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি জামায়াতের উপর দিয়ে যায় তবে দেশ বুঝি শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি।

ডা. শফিক যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিতদের আশ্রয় এবং নাগরিকত্ব দেওয়ায় আমি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আশা প্রকাশ করছি আপনারা কোনো দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেবেন না।

তিনি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাকে সংবর্ধনা নিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আপনারা প্রবাসে থেকে ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ করেছেন। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন। এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

জামায়াতের আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন, আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক স্বীয় মর্যাদার সাথে বসবাস করবে। যেখানে আমাদের নারীরা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করবে। আমাদের বিশাল ম্যানপাওয়ারকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক আমীরে জামায়াত প্রফেসর গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের সকল নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি ২০২৪ এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সাথে রাস্তায় নেমে আসে। শহীদ আবু সাঈদ দু-হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে বলেছিল, হয় অধিকার দাও, না হয় গুলি কর। আহত ও পঙ্গু হয়েছে হাজারো ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার এমন ত্যাগের বিনিময়েই দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। এখন আমাদেরকে আহতদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি আহত ও নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও কমিউনিটির পরিচিত মুখ মুফতি সদরুদ্দিন, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও উলামা মাশায়েখ ইউকে’র সভাপতি শায়েখ মওদুদ হাসান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যরিস্টার আবু বকর মোল্লা, প্রফেসর ডক্টর হাসনাত হোসাইন এমবিই, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, মানবাধিকার সংগঠন মুসলিম ভয়েস-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাহফুজ নাহিদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট আইনজীবী মির্জা আসহাব বেগ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদাউস জলিল, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চ্যানেল আই ইউরোপের সাবেক এমডি রেজা আহমেদ চৌধুরী শুয়েব, লন্ডনের টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, দৈনিক আমার দেশের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট অলি উল্লাহ নোমান, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাদেকুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সুযোগ্য সন্তান ব্যারিস্টার নাজিব মোমিন, নির্যাতিত সাংবাদিক এনাম চৌধুরী প্রমুখ।

সাবেক ছাত্র নেতা আবু সালেহ ইয়াহইয়া ও শামসুল আলম গোলাপ এর পরিচালনায় পূর্ব লন্ডনের দ্যা রয়েল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত উক্ত নাগরিক সংবর্ধনা’য় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম শাহীন। অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পিকার কাউন্সিলর জাহেদ চৌধুরী, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের সাবেক কেবিনেট মেকাউন্সিলর কবির হোসাইন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে মহাগ্রন্থ আল কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা হাফিজ কাজি হামিদুল হক। শিল্পী নওশাদ মাহফুজ ও কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে শিল্পীদের দুটি পৃথক দল ইসলামিক নাশিদ পরিবেশন করেন।

লন্ডনের বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনতা, নেতাকর্মী ও সুধী-শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি এক বিশাল গণজমায়েতে রূপলাভ করে।

এ সময় অনুষ্ঠানের আয়োজক কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে জনাব মাহফুজ নাহিদের নেতৃত্বে ফুলের তোড়া দিয়ে ডা. শফিকুর রহমানকে বরণ করে নেয়া হয়।